SSC ২০২৫ রেজাল্ট বৈষম্যের অভিযোগ
এসএসসি ২০২৫ ফলাফলে বৈষম্যের অভিযোগে উত্তাল শিক্ষার্থীরা
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের একাংশ ফলাফল নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করছে। শিক্ষার্থীরা এখন সরাসরি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
আন্দোলনের কারণ ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
অনেক শিক্ষার্থীর দাবি, তারা উচ্চ নম্বর পেয়েও ফেল করেছে। এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তিনি সিকিউ অংশে ৭০-এর মধ্যে ৬১ নম্বর পেয়েছেন এবং এমসিকিউতে ৩০-এর মধ্যে ৯ নম্বর পেয়েছেন, অর্থাৎ মোট নম্বর দাঁড়িয়েছে ৭০, তবুও তাকে অকৃতকার্য ঘোষণা করা হয়েছে।
- এই শিক্ষার্থীর প্রশ্ন? “৭০ নম্বর পেয়েও ফেল করলে তাহলে পাসের মানদণ্ড কি?”
- এমন বৈষম্য দূর করার জন্যই তারা আন্দোলনে নেমেছে।
আরেক শিক্ষার্থী জানান, তিনি ১১টি বিষয়ে এ-প্লাস পেয়েছেন, কিন্তু একটি বিষয়ে মাত্র ৩৩ পেতে না পারায় ফেল করেছেন। তার বক্তব্য ছিল:
“যদি আমার ১১টি বিষয়ে এ-প্লাস তোলার সামর্থ্য থাকে, তবে কি একটি বিষয়ে অন্তত ৩৩ তুলতে পারার যোগ্যতা আমার নেই?”
সিস্টেমের অসঙ্গতি
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনুযায়ী, যারা সিকিউতে ভালো করেছে কিন্তু এমসিকিউতে তুলনামূলক কম নম্বর পেয়েছে, তারা ফেল করেছে। অথচ কেউ কেউ মোটে ৩৩ পেয়ে পাস করেছে, যার মধ্যে এমসিকিউতে হয়তো ১০ এবং সিকিউতে ২৩ নম্বর ছিল।
- একপক্ষ: ৩৩ পেয়ে পাস
- অন্যপক্ষ: ৭০ পেয়ে ফেল
এতে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক পাশ সিস্টেমের কারণে এমন বৈষম্য তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে।
SCC রেজাল্ট রিভিউ সিস্টেম পরিবর্তন
অতীতের চেয়ে ব্যতিক্রম চিত্র
২০২৫ সালে বোর্ড চ্যালেঞ্জের আবেদনের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড গড়েছে।
- গত বছর (২০২৪) ঢাকা বোর্ডে আবেদন করেছিল প্রায় ৭১ হাজার শিক্ষার্থী এবং খাতা চ্যালেঞ্জ ছিল ১.৫ লাখের বেশি।
- এবছর (২০২৫) শুধু ঢাকা বোর্ডে আবেদন করেছে ৯২ হাজার শিক্ষার্থী, আর মোট খাতা চ্যালেঞ্জ হয়েছে ২ লাখের বেশি।
এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা কমেছে, এবং তারা নিজের রেজাল্টে অসন্তুষ্ট।
ফল সংশোধনের বাস্তব চিত্র
শুধু অভিযোগ নয়, বাস্তবেও অনেক রেজাল্ট সংশোধন হচ্ছে:
- বগুড়ায় ৮৮৩ শিক্ষার্থীর ফল সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- আগেও ৪৮ শিক্ষার্থীর ফলাফল ফেল থেকে পাশ হিসেবে সংশোধন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে, এসব সংশোধন তাৎক্ষণিক হলেও স্থায়ী সমাধান আসা প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি চাওয়া
শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক সংশোধনের চেয়ে সিস্টেম পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছে। তাদের চাওয়া:
- সিকিউ ও এমসিকিউ মিলিয়ে গড় নম্বরের ভিত্তিতে পাস/ফেল নির্ধারণ।
- একটি বিষয়ে কম নম্বর পেলেই ফেল নয়-পুরো পারফরম্যান্স বিবেচনায় ফলাফল।
কারণ:
- ১১টি বিষয়ে এ-প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী কখনো ফেল করার মতো নয়।
- ৭০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীকে ফেল বলা যুক্তিসঙ্গত নয়।
SSC আন্দোলন শিক্ষার্থীদের দাবি
যেসব শিক্ষার্থীর মন্তব্য সামনে আসছে না
সব শিক্ষার্থী মিডিয়ায় আসতে পারছে না। অনেকে তাদের কষ্ট, বাস্তবতা বা ভুলের শিকার হলেও মুখ খুলতে পারছে না। সিস্টেম যদি পরিবর্তিত না হয়, তাহলে এমন হাজারো শিক্ষার্থীর প্রতি অন্যায় চলতেই থাকবে।
বর্তমান আন্দোলন ও ফলাফলের অসঙ্গতি শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গভীর সংকেত। যে শিক্ষার্থী ৭০ নম্বর পেয়েও ফেল করে এবং অন্যজন ৩৩ পেয়ে পাস করে, সেখানে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা একান্ত জরুরি। শুধু কয়েকজন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন নয়-একটি স্থিতিশীল, যৌক্তিক ও সর্বজনীন ফলাফল মূল্যায়ন পদ্ধতি তৈরি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের ২০২৬, ২০২৭ ব্যাচগুলো এই বিভ্রান্তির শিকার না হয়।