পরীক্ষায় ভালো করার ১০টি সেরা কৌশল

পরীক্ষা শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল একটি ফলাফলের বিষয় নয়, বরং আপনার জ্ঞান, পরিশ্রম এবং প্রস্তুতির প্রতিফলন। সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা সম্ভব ইনশআল্লাহ । তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কথা বলব কিভাবে একজন পরীক্ষার্থী তার পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারে সে বিষয় নিয়ে। নিচে পরীক্ষায় ভালো করার ১০টি কার্যকর কৌশল তুলে ধরা হলো।

 

১. পড়াশোনার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন

যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রথমেই একটি সুস্পষ্ট স্টাডি প্ল্যান থাকা জরুরি। কোন দিনে কোন বিষয় পড়বেন, কোন টপিক আগে শেষ করবেন, রিভিশনের সময় কখন, খাওয়া-দাওয়ার সময়, গোসল, বিশ্রাম – এক কথায় দিনের 24 ঘন্টার একটা রুটিন তৈরি করে সব কিছু লিখে নিন। পরিকল্পনা মেনে চললে সময় নষ্ট হবে না এবং প্রস্তুতি সুসংগঠিত হবে।

 

২. সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করুন

সময় ব্যবস্থাপনা পরীক্ষার প্রস্তুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। প্রতিটি বিষয় বা অধ্যায়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন বিষয়গুলোর জন্য বেশি সময় বরাদ্দ করুন, আর সহজ বিষয়গুলো পরে রাখুন বা কম সময় দিন।

 

৩. পূর্বের প্রশ্নপত্র অনুশীলন করুন

গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র অর্থাৎ বোর্ড প্রশ্ন সমাধান করা খুবই প্রয়োজন। কারন এতে প্রশ্নের ধরন বোঝা যায় এবং কোন টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আর যত বেশি বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন এনালাইসিস করা যায় তত অভিজ্ঞতা বাড়ে।

 

৪. বিষয়ভিত্তিক নোট তৈরি করুন

নোট নেওয়ার অভ্যাস পড়াশোনাকে সহজ করে তোলে। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সংজ্ঞা, সূত্র বা তথ্য আলাদা করে খাতায় লিখে রাখুন। পরীক্ষার আগে এই নোটগুলোই রিভিশনের জন্য অসাধারণ সহায়ক হবে। কারণ পরীক্ষার আগ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য এই সংরক্ষিত নোটগুলো অনেক ভূমিকা রাখবে।

 

কিভাবে পরীক্ষায় ভালো করবেন – ১০টি সহজ ও কার্যকর উপায়

৫. নিয়মিত রিভিশন করুন

রিভিশন ছাড়া পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন। একবার পড়ার পর ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই নিয়মিত রিভিশন করুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন শুধু পুরোনো অধ্যায়গুলো পুনরায় পড়ার চেষ্টা করুন। কারন যেকোনো জিনিস চর্চা না রাখলে আস্তে আস্তে মানুষ সেগুলো ভুলতে শুরু করে।

 

৬. মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল শিখুন

পড়াশোনার সময় মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য জিনিস থেকে দূরে থাকুন। ২৫-৩০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিট বিরতি নেওয়ার পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন, এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। একটানা পড়ে যে কয় অধ্যায় বা পৃষ্ঠা আয়ত্ব করতে পারবেন, তার থেকে পড়ার মাঝে মাঝে 25-30 মিনিট পর পর 5-7 মিনিট বিরতি দিলে তার থেকে অনেক বেশি পড়া আয়ত্ব করতে পারবেন ইনশআল্লাহ।

 

৭. শরীর মনের যত্ন নিন

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা পড়াশোনার জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, হালকা ব্যায়াম এবং পানি পান – এগুলো আপনার মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও সতেজ রাখবে। দিনে কমপক্ষে 2-3 লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন।

 

৮. কঠিন বিষয় আগে শিখুন

পড়াশোনার শুরুতেই কঠিন ও জটিল বিষয়গুলো শেষ করার চেষ্টা করুন। এতে শেষ মুহূর্তে চাপ কমবে এবং সহজ বিষয়গুলো দ্রুত রিভিশন করা যাবে। আর প্রথমেই যদি সহজ বিষয়গুলো পড়া শুরু করেন তাহলে শেষের দিকে গিয়ে কঠিন বিষয়গুলো আরো জটিল লাগতে পারে নিজের কাছে।

 

৯. পরীক্ষার আগের দিন চাপ কমান

পরীক্ষার আগের দিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা না করে শুধুমাত্র পড়া বিষয়গুলো হালকা রিভিশন করুন। যথেষ্ট ঘুমান এবং মানসিকভাবে নিজেকে শান্ত রাখুন। আমরা অনেকে এর উল্টোটা করি। সারা বছর পড়ার গুরুত্ব না দিয়ে পরীক্ষার আগের রাতেই অনেকে সারারাত ধরে পড়াশোনা করি। এই ভুল করা যাবেনা। পরীক্ষার আগের দিন রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করুন। আর অধ্যায়গুলো শুধু রিভিশন দেওয়ার চেষ্টা করুন।

 

১০. পরীক্ষার হলে সময় বণ্টন করুন

পরীক্ষার হলে প্রথমে সহজ প্রশ্নগুলো সমাধান করুন, এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সময় বণ্টন করে উত্তর লিখুন এবং শেষ ৫-১০ মিনিট উত্তরপত্র রিভিশনের জন্য রাখুন।

পরীক্ষায় ভালো করা কেবল মেধার উপর নির্ভর করে না, বরং সঠিক কৌশল, নিয়মিত অধ্যবসায় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের ফল। উপরের ১০টি কৌশল অনুসরণ করলে পরীক্ষার ফলাফলে অবশ্যই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে ইনশআল্লাহ। মনে রাখবেন, অধ্যবসায় ও সঠিক দিকনির্দেশনাই সাফল্যের চাবিকাঠি।

 

আমার মতে,

পরীক্ষায় সফলতা শুধুমাত্র পরীক্ষা দিবার আগের কয়েক দিনের মেহনতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার ফল। সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ, নিয়মিত পড়াশোনা এবং সময়ের সদ্ব্যবহার ছাড়া ভালো ফলাফল পাওয়া খুবই কঠিন। আমার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ছোট ছোট কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে, যেমন পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশোনা, নিয়মিত রিভিশন দেওয়া ইত্যাদি তারাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে।

 

তাছাড়া, পরীক্ষার সময় মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগ ছাত্রদের পারফরম্যান্স খারাপ করে দেয়। তাই আমি মনে করি, শুধু পড়াশোনা নয়, মানসিক প্রস্তুতির কথাও গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ধৈর্য্য ধরে ধাপে ধাপে এগোলে, সফলতা আসবেই ইনশআল্লাহ।

 

সবশেষে, পরীক্ষার ফলাফল শুধু আপনার মেধার নয়, বরং আপনার ধারাবাহিক পরিশ্রম, সময় ব্যবস্থাপনা ও মানসিক শক্তিরও প্রতিফলন। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী অধ্যবসায় চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ আমি সবাইকে দিবো।

 

পরীক্ষায় ভালো করার জন্য এই ১০টি কৌশল আপনাকে শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করাবে না, বরং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করি।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *