উপবৃত্তির টাকা নিয়ে দুর্নীতি
উপবৃত্তির টাকা দিয়ে গেস্ট টিচারের বেতন! বঞ্চিত দরিদ্র শিক্ষার্থীরা
নোয়াখালী সদর উপজেলার ইসলামগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে গুরুতর অভিযোগ। সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কীভাবে টাকা নেওয়া হচ্ছে?
স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন—
বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হচ্ছে মাসিক বিদ্যুৎ বিল ও আইসিটি ফি।
বিভিন্ন শ্রেণির জন্য নির্ধারিত টাকা:
- ৬ষ্ঠ শ্রেণি: ৭ মাসের বিল বাবদ ৪২০ টাকা
- ৭ম শ্রেণি: ৪৯০ টাকা
- ৮ম শ্রেণি: ৫৬০ টাকা
- ৯ম-১০ম শ্রেণি: ৭০০ টাকা
এই টাকা না দিলে পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হচ্ছে না, ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না।
সেশন ফি নিয়েও অভিযোগ:
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সেশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০০ টাকা।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত।
অভিভাবকদের ভাষ্যে:
“আগের কোনো বকেয়া না থাকার পরও আমার মেয়ের জন্য ১৫০০ টাকা সেশন ফি নিয়েছে। কিছু অভিভাবকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে আরও বেশি।”
উপবৃত্তির টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে কেন
প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য:
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বদেশ চন্দ্র দাস বিষয়টি স্বীকার করে বলেন:
“বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তাই ৪ জন গেস্ট টিচার দিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০। তাদের কাছ থেকে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন অনুযায়ী কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, সেশন ফি হিসেবে বোর্ড নির্ধারিত ১২০০ টাকা-ই নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যেটা নেওয়া হয়েছে, তা হয়তো পূর্ববর্তী বকেয়ার জন্য।
ম্যানেজিং কমিটির যুক্তি:
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবিএম আজাদ উদ্দিন জানান:
শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে কিছু অর্থ নেওয়া হচ্ছে।
ইলেকট্রিক বিল ও গেস্ট টিচারের বেতন দিতে না পারায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
তবে যদি বোর্ডের নিয়ম লঙ্ঘন হয়ে থাকে, ভবিষ্যতে আর নেওয়া হবে না।”
সরকারি নির্দেশ কী বলে?
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:
উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের থেকে কোনো অবস্থাতেই টাকা নেওয়া যাবে না।
বেতন বা টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়েছে।
সরকার নির্ধারিত পরিমাণ বেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়— সরাসরি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নয়।
যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ম অমান্য করে টাকা নেয়, তাহলে তা সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে এবং অভিযোগ জানানো যাবে।
উপসংহার:
একদিকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের উপবৃত্তি সহায়তা, অন্যদিকে সেই টাকা দিয়েই গেস্ট টিচারদের বেতন! অভিভাবকরা বলছেন— “আমরা তো এই টাকা দিয়েই সংসার চালাই, এখন পড়াশোনার জন্যও টাকার দুশ্চিন্তা!” এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে— স্কুলের দায় সরকার নেবে, নাকি অভাবী শিক্ষার্থীদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে?