একাদশ শ্রেণিতে উপবৃত্তি পাওয়ার নিয়ম (২০২৫)
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি দিয়ে থাকে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানতে চান—“উপবৃত্তি পাওয়ার নিয়ম কী?”, “কে কে উপবৃত্তি পাবে?” এই আর্টিকেলে আমরা একাদশ শ্রেণির উপবৃত্তি পাওয়ার শর্ত, আবেদন পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ করেছি।
উপবৃত্তি কী?
উপবৃত্তি হলো এমন একটি আর্থিক সহায়তা, যা সরকার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিতে দিয়ে থাকে। এটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষার্থীদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়।
কারা উপবৃত্তি পেতে পারেন?
একাদশ শ্রেণিতে উপবৃত্তি পেতে হলে শিক্ষার্থীকে নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
- সরকারি বা সরকারি অনুমোদিত কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে।
- নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হতে হবে।
- এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল (সাধারণত জিপিএ ৪.০০ বা তার বেশি) থাকতে হবে।
- নিয়মিত উপস্থিতি ও ভালো আচরণ থাকতে হবে।
- কোনো ধরনের নিয়মভঙ্গ বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা চলবে না।
উপবৃত্তির জন্য আবেদন করার নিয়ম
বর্তমানে উপবৃত্তির জন্য অনলাইন আবেদন বাধ্যতামূলক। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো:
ধাপ ১: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক তালিকা প্রস্তুত
প্রথমে প্রতিটি কলেজ নিজস্ব শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের তালিকা তৈরি করে এবং বৃত্তি কার্যক্রমের ওয়েবসাইটে আপলোড করে।
ধাপ ২: শিক্ষার্থী তথ্য যাচাই
তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের NID বা জন্মনিবন্ধন, ব্যাংক হিসাব নম্বর, অভিভাবকের নামসহ তথ্য যাচাই করা হয়।
ধাপ ৩: বিকাশ/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে লিংক
বর্তমানে উপবৃত্তির টাকা সরকারি অনুমোদিত বিকাশ বা সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়। সেজন্য শিক্ষার্থীকে নিজের নামে বিকাশ একাউন্ট (নগদ/রকেট নয়) বা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে।
ধাপ ৪: টাকা প্রেরণ
নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের একাউন্টে প্রতি ছয় মাস বা এক বছর অন্তর উপবৃত্তির টাকা চলে আসে। পরিমাণ:
- মাসিক উপবৃত্তি: ২০০ টাকা
- এককালীন শিক্ষা উপকরণ ভাতা: ১,০০০ টাকা (সাধারণত বছরে একবার)
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
উপবৃত্তির জন্য নিচের কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হতে পারে:
- এসএসসি মার্কশিট ও সনদ
- জন্মনিবন্ধন / জাতীয় পরিচয়পত্র
- কলেজের দেওয়া সনদপত্র (গরিব/অভাবী প্রমাণপত্র)
- পিতার পেশা ও আয় সংক্রান্ত সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- শিক্ষার্থীর ছবি
- বিকাশ/ব্যাংক একাউন্টের কপি
কবে আবেদন করতে হয়?
উপবৃত্তি কার্যক্রম কলেজে ভর্তি হওয়ার ১-৩ মাস পর সাধারণত শুরু হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয় এবং অনেক সময় নিজে আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- শিক্ষার্থীর নিয়মিত উপস্থিতি, ভালো ফলাফল ও আচরণ অব্যাহত রাখতে হবে, না হলে উপবৃত্তি বাতিল হতে পারে।
- কেউ যদি একাধিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়, বা ভুয়া তথ্য দেয়, তবে তার উপবৃত্তি বাতিল ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সহায়তা পেতে কোথায় যোগাযোগ করবেন?
- স্থানীয় কলেজ অফিসে
- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস
- ডিজিটাল বৃত্তি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (DSHE Scholarship Portal): www.dshe.gov.bd
আমার মতামত
একাদশ শ্রেণির উপবৃত্তি সুবিধা সত্যিই দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় সহায়তা। সঠিক তথ্য জানা এবং সময়মতো আবেদন করলেই আপনি এই সুবিধাটি পেতে পারেন। এটি শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, বরং উচ্চশিক্ষার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণা।