কলেজ পরিবর্তনের সময় ও নিয়ম (২০২৫): বিস্তারিত গাইড
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে নিজের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হওয়া। তবে অনেক সময় প্রথমেই প্রত্যাশিত কলেজে সুযোগ না পাওয়ার কারণে ভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে হয়। ভর্তি হওয়ার পর অনেকেই বুঝতে পারেন, কলেজটি তাদের প্রয়োজন বা পরিবেশ অনুযায়ী উপযুক্ত নয়। আবার কেউ পারিবারিক, ভৌগোলিক, একাডেমিক কিংবা নিরাপত্তাজনিত কারণে কলেজ পরিবর্তন করতে আগ্রহী হন।
এই কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজ পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত সময় ও নিয়মাবলী ঠিক করেছে, যা মাইগ্রেশন এবং পুনরায় আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। নিচে ২০২৫ সালের নিয়ম ও সময়সীমা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
কলেজ পরিবর্তনের সময়সীমা (২০২৫)
ধাপ | সময়সীমা | উদ্দেশ্য |
১ম মেধা তালিকা | ২২ আগস্ট ২০২৫ | প্রথম কলেজ নির্ধারণ |
১ম মাইগ্রেশন + ২য় মেধা তালিকা | ২৮ আগস্ট ২০২৫ | মাইগ্রেশনের মাধ্যমে কলেজ পরিবর্তন |
২য় মাইগ্রেশন + ৩য় মেধা তালিকা | ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আরও একবার কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ |
৩য় ধাপ আবেদন (নতুন করে) | ৭ – ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | যাদের এখনো কলেজ হয়নি বা বদলাতে চান |
চূড়ান্ত ভর্তি | ১৫ – ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | পরিবর্তিত কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করা |
কলেজ পরিবর্তনের প্রধান দুইটি উপায়:
১. মাইগ্রেশন (Migration)
মাইগ্রেশন হলো আপনার আবেদনকৃত পছন্দক্রম অনুযায়ী উপরের কলেজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া।
শর্তাবলী:
- আপনি যদি আগে একটি কলেজে ভর্তি হয়ে থাকেন এবং পছন্দক্রমে উপরের দিকে অন্য কলেজ দিয়ে থাকেন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাইগ্রেশন হবে।
- মাইগ্রেশন চালু রাখতে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করতে হয় না।
- মাইগ্রেশনের সময় পূনঃআবেদন বা টাকা জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
- মাইগ্রেশনে নতুন কলেজে ভর্তি হলেও নতুন করে ফি দিতে হয় না, তবে পুরোনো ফি ফেরতও পাওয়া যায় না।
উদাহরণ:
আপনি প্রথমে ৩য় পছন্দের কলেজে ভর্তি হয়েছেন। যদি ২য় বা ১ম পছন্দে আসন খালি থাকে এবং আপনি মাইগ্রেশনের জন্য উপযুক্ত হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলেজ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
২. পুনরায় আবেদন (Re-application)
যারা আগে কোনো কলেজে ভর্তি হননি বা ভর্তির পর নিজে থেকে বাতিল করেছেন, তারা নতুন করে আবেদন করে কলেজ পরিবর্তন করতে পারবেন।
ধাপ:
- এই লিংকে প্রবেশ করুন।
- ভর্তি বাতিল (যদি আগেরটা থাকে) করে নতুন আবেদন করুন।
- পছন্দক্রম অনুযায়ী EIIN সহ নতুন কলেজ নির্বাচন করুন।
- আবেদন ফি পরিশোধ করুন এবং নিশ্চয়ন করুন।
সতর্কতা:
যদি আপনি পুনরায় আবেদন করে নতুন মেধা তালিকায় স্থান না পান, তাহলে আপনি কোনো কলেজেই ভর্তি থাকতে পারবেন না। তাই নতুন করে আবেদন করার আগে ভালোভাবে চিন্তা করুন।
কলেজ পরিবর্তনের কারণ (সাধারণ পরিস্থিতি)
- ভালো মানের কলেজে যেতে আগ্রহ
- বাড়ির কাছাকাছি কলেজে পড়তে ইচ্ছুক
- নিরাপত্তা বা পরিবেশগত সমস্যা
- আগে বেছে নেওয়া কলেজে প্রয়োজনীয় সাবজেক্ট নেই
- পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে (ট্রান্সফার/রিলোকেশন)
প্রয়োজনীয় তথ্য / টিপস
- মাইগ্রেশন চালু রাখতে হবে ভর্তি থাকার সময়েই
- EIIN সঠিকভাবে লিখুন, ভুল EIIN দিলে কলেজ পরিবর্তন নাও হতে পারে
- নতুন আবেদন করলে পুরনো ভর্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে
- পছন্দক্রমে উপরের দিকে ভালো কলেজ রাখুন
- প্রয়োজনে কলেজে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয় নিশ্চিত করুন
সাহায্যের জন্য যোগাযোগ
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: xiclassadmission.gov.bd
- শিক্ষা বোর্ড হেল্পলাইন নম্বর (প্রতিটি বোর্ডের নিজস্ব সাপোর্ট সেন্টার রয়েছে)
- কলেজের নিজস্ব EIIN ও যোগাযোগ নম্বর
আমার মতে
বর্তমানে কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আশীর্বাদ। অনেকে প্রথমবারেই নিজের কাঙ্ক্ষিত কলেজ পান না। কিন্তু সরকার নির্ধারিত সময়সীমা ও মাইগ্রেশন নীতিমালার মাধ্যমে তারা পরবর্তীতে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
তবে এক্ষেত্রে সচেতনতা ও তথ্য জানার অভাব অনেকের ক্ষতির কারণ হয়। অনেকেই ভুল EIIN দেন, ভুল পছন্দক্রম সাজান, আবার কেউ শেষ মুহূর্তে আবেদন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। তাই আমার মতে, কলেজ পরিবর্তন করতে চাইলে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নিয়ম জেনে এগোতে হবে এবং সঠিকভাবে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে হবে।
যারা ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভালো কলেজে যেতে চান, তারা অবশ্যই মাইগ্রেশন অপশন চালু রাখবেন
আর যারা কলেজ বাতিল করে নতুন করে আবেদন করবেন, তারা সময় ও সঠিক তথ্য জেনে কাজ করবেন