এসএসসি পরীক্ষায় এবার সবচেয়ে বেশি ফেল
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষাজগতে যেন এক ভূমিকম্প বয়ে গেল। এবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছয় লক্ষাধিক- এটি গত ১৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এমন পরিসংখ্যান আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সমস্যা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, বরং পুরো শিক্ষাব্যবস্থার গভীরে লুকিয়ে আছে কিছু অদৃশ্য গলদ।
চলুন, শিক্ষাব্যবস্থার যে কিছু ত্রুটি রয়েছে তার নমুনা কিছু দেখে নেয়া যাক
একটি বিষয়ের পরীক্ষা, অথচ ফেল দুইটিতে!
অনেক শিক্ষার্থী একটিমাত্র বিষয়ে পরীক্ষা দিলেও ফলাফলে দেখা গেছে তারা ফেল করেছে দুই বা ততোধিক বিষয়ে। এমনকি, একটি স্কুল থেকে ৬৮ জন শিক্ষার্থী শুধু এই কারণে ফেল করেছে যে তাদের প্র্যাকটিক্যাল নম্বর সংযোজনই করা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে- এই দোষ কার? শিক্ষার্থীদের, না কি শিক্ষকদের, না কি শিক্ষা বোর্ডের প্রশাসনিক ত্রুটির?
শুধু এই ঘটনাই নয়, এরকম কয়েকটা উদাহরণ রয়েছে। যেখানে খাতার মূল্যায়নে, নম্বর যোগে, প্রশ্ন সেটিং-এ কিংবা ফল প্রকাশের সফটওয়্যারে গুরুতর ত্রুটি থেকে গেছে। তাহলে এই দায়ভার একতরফাভাবে শিক্ষার্থীদের কাঁধে চাপানো কতটা যৌক্তিক?
শিক্ষার্থীদের দাবি: সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার সুযোগ চাই!
ফল প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামছে। “দ্রুত সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা নিন” এই দাবিতে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শিক্ষা বোর্ডের সামনে আগামী ১৪ জুলাই মানববন্ধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই দাবিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশাল আন্দোলন।
শিক্ষাবিদদের পরামর্শ
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে বিগত বছরগুলোতে নম্বরের শিথিলতা, সহজ প্রশ্ন, নমনীয় খাতা মূল্যায়নের কারণে পাশের হার ছিল অতিরঞ্জিত। এবার যখন সেই নিয়মে পরিবর্তন এসেছে, তখন হঠাৎ করে এত শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, এসব শিক্ষার্থীর জন্য দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থায় সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা নেওয়া হোক।
CQ-MCQ-মিলে পাশ
এই বছর বহু শিক্ষার্থী মাত্র একটি নম্বারের ব্যবধানে এ+ মিস করেছে, আবার অনেকে এক নম্বরের জন্য ফেল করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে-এই ছোট্ট ব্যবধান কি একটা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে? আমরা কি তাকে আরেকবার সুযোগ দিতে পারি না?
তোমাদের করণীয়: চ্যালেঞ্জ করো, প্রস্তুতি নাও
যারা এখনও বোর্ড চ্যালেঞ্জ করেনি, তাদের অবশ্যই দ্রুত আবেদন করা উচিত। কারণ, অনেক সময় ভুল ফল সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কৃতকার্য হয়েছে। পাশাপাশি, এখনই সময় পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণের।
এই ফলাফল কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আয়না। ফেলের সংখ্যা নয়, আমরা চাই ভবিষ্যতের সম্ভাবনার সংখ্যা বাড়ুক। যারা ফেল করেছো, হতাশ হবে না। আরেকটা সুযোগের অপেক্ষায় থাকো। সাহস রেখো, চ্যালেঞ্জ করো, এবং তৈরি হও নতুন যাত্রার জন্য।
শিক্ষা বোর্ডের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া-তাহলে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ফিরে পাবে তাদের প্রাপ্য স্বপ্নগুলো।