মিড ডে মিল কবে থেকে শুরু
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ বিলম্বিত হচ্ছে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্প
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষ, লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য নির্ধারিত দুপুরের খাবার (মিড ডে মিল) বিতরণ শুরু হওয়ার কথা ছিল চলতি জুলাই মাসেই। কিন্তু নির্ধারিত সময়মতো টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারায় এ উদ্যোগে এসেছে বড় ধরনের বিলম্ব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত কার্যক্রম চালু করতে পারেনি। ফলে, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাতে খাবার পৌঁছায়নি।
সেপ্টেম্বরেই চালু হচ্ছে ‘মিড ডে মিল’
সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এই মিড ডে মিল কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিকভাবে দেশের ৮ বিভাগের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলায় এই কার্যক্রম চালু হবে। এতে অংশ নেবে ১৯ হজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপকৃত হবে প্রায় ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী।
মিড ডে মিল নতুন আপডেট
প্রকল্পের সময়কাল ও উদ্দেশ্য
এই মিড ডে মিল প্রকল্পটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। সরকার আশা করছে, পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে পরবর্তীতে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এটি চালু করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব হারুন অর রশীদ জানান:
“সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি চালু করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। অক্টোবরের মধ্যে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। লক্ষ্য একটাই— শিক্ষার্থীদের কাছে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দেওয়া।”
মিড ডে মিল সরকারী ঘোষণা
প্রকল্প ব্যয় ও বাজেট
প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫,৪৫২ কোটি টাকার বেশি।
এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ ব্যয় করা হবে শুধুমাত্র খাদ্য সরবরাহে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২,১৬৪ কোটি টাকার বেশি।
সপ্তাহে ৫ দিন পুষ্টিকর খাবার
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে:
দিন | খাবার |
রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি | বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম |
সোমবার | বনরুটি ও ইউএইচটি দুধ |
বুধবার | ফরটিফাইড বিস্কুট ও মৌসুমি ফল (যেমন কলা) |
খাদ্যের পরিমাণ:
- বনরুটি – ১২০ গ্রাম
- ডিম – ৬০ গ্রাম
- দুধ – ২০০ মিলি
- বিস্কুট – ৭৫ গ্রাম
- মৌসুমি ফল – ১০০ গ্রাম
এই তালিকা তৈরিতে শিক্ষার্থীদের বয়স, ওজন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি চাহিদার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।
মনিটরিং ও প্রশিক্ষণ
সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে থাকবেন:
- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
- উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
- মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা
- নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক
- প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও কার্যকর করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রায় ১৯,৭১৯ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য ১৯২টি ব্যাচে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম আয়োজন করা হবে।
শেষ কথা
এই মিড ডে মিল প্রকল্প শুধু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মান উন্নয়নের জন্য নয়, বরং তাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ানো ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি এ উদ্যোগ সফল হলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে নিঃসন্দেহে।